সারভাইকাল (ঘাড়ে) ব্যথা কি?
ঘাড়ের ব্যথা পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা, যা সাধারণতঃ তাদের মধ্যে মাঝ বয়েসে দেখা দেয়। এটির উৎপত্তি সারভাইকাল ভারটিব্রে বা মেরুদন্ডে হওয়ার কারণে এটিকে সারভাইকাল পেইন বা ব্যথাও বলা হয়ে থাকে। সারভাইকাল বা ঘাড়ের ব্যথা সাধারণত একটি মাস্কুলোস্কেলিটাল বা মস্তিষ্কজনিত রোগের ফলাফলের কারণে হয় এবং ঘাড়ের চারপাশের পেশীগুলিতে হালকা ব্যথা থেকে শুরু করে স্বাভাবিকভাবে ঘাড় ঘোরানোর ক্ষেত্রেও অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে এবং এমনকি এর ফলে উপরের অঙ্গগুলির সংবেদনশীলতাও কমে যেতে পারে।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ঘাড় ব্যথা একটি তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) অবস্থায় পরিণত হতে পারে। সাধারণভাবে ঘাড় ব্যথার সঙ্গে যুক্ত লক্ষণগুলি হল:
- ঘাড়ের পেশীগুলির শক্ত হয়ে যাওয়া।
- ঘাড় ঘোরাতে অক্ষমতা।
- উপরের অঙ্গগুলির মধ্যে ঝিঝির অনুভুতি বা অসাড়তা অনুভব করা।
- ঘাড়ে এবং এর আশেপাশের জায়গাগুলিতে ব্যথার অনুভুতি।
- কাঁধে ব্যথা এবং উপরের অঙ্গগুলিতে ব্যথা।
একটি বিরল লক্ষণ যেটি আপনি অনুভব করতে পারেন সেটি হল মাইগ্রেনের অ্যাটাক। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে, কিছু স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এটির প্রধান লক্ষণগুলি কি কি?
ঘাড় ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর সাধারণ কারণগুলি হল:
- ঘাড়ে তীব্র টান ধরা।
- হুইপ্ল্যাশ আঘাত।
- খেলতে গিয়ে লাগা আঘাত।
- ডিজেনারেটিভ বা অপজনন সম্বন্ধীয় রোগ।
- কাজের সময় খারাপ ভঙ্গিতে বসা।
- ঘাড়ের কাছে ঝাঁকুনি অনুভূত হওয়া।
- কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার।
- ক্লান্তি বোধ করা বা ঘুমের অভাব।
- সারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস, আর্থরাইটিস এবং ওস্টিওপরোসিসের মত রোগের উপস্থিতি।
- মানসিক কারণ যেমন মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ।
কখনো কখনো, ঘাড়ের এলাকায় একটি টিউমারের বেড়ে ওঠাও ঘাড়ে ব্যথার কারণ হতে পারে।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ মেডিকাল ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর নির্ভর করে ঘাড়ে ব্যথার কারণ নির্ণয় করা হয়। রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত ডায়গনোস্টিক সরঞ্জামগুলির ব্যবহার করা যেতে পারে:
- ভারটিব্রাল কলাম বা মেরুদন্ডের এক্স-রে।
- ঘাড়ের এমআরআই।
- সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন এবং ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি-এর জন্য রক্ত পরীক্ষা, বিশেষ করে রোগীর যদি কোন একটি প্রদাহজনক রোগ আগেই ধরা পরে থাকে।
ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসাগুলি হল:
- ফিজিওথেরাপি- স্বল্পমেয়াদী জয়েন্ট ইমমোবিলাইজেশন।
- ঘাড়ের ব্যায়াম।
- পালস্ড ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি।
- নন-স্টেরয়েডিয়াল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ এবং মাসল রিল্যাক্সেন্ট বা পেশী শিথিলকারক দিয়ে চিকিৎসার দ্বারা ব্যথার নিরাময়।
- গরম সেক।
- ক্রনিক বা দুরারোগ্য ব্যথা যেগুলির দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে সেগুলি হল:
- পেশী শক্তিশালী করে তোলা এবং সহনশীলতার ব্যায়াম।
- ফিজিওথেরাপি এবং ডায়াথারমি।
- অ্যানালজেসিক্স বা বেদনানাশক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং পেশী শিথিলকারক বা মাসল রিল্যাক্সেন্ট।
- কাউন্সেলিং।
- বৈকল্পিক থেরাপি যেমন আকুপাংচার।
- যদি কোন স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে সার্জারি।
সবমিলিয়ে বলা যায়, ঘাড়ের ব্যথা থেকে ঘাড় থেকে শুরু হয় এবং পেশীজনিত ব্যথা থেকে স্নায়বিক জটিলতা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে এটির চিকিৎসা করা যেতে পারে। কাজের সময় সঠিক বা ভাল ভঙ্গিমায় বসা এবং সঠিক ব্যায়াম এই ব্যথার রোগকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।