ক্রন ডিজিজ কি?
ক্রনস ডিজিজ হলো একপ্রকার অন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুখ (আইবিডি)। এটা পাচকতন্ত্রের একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের দশা এবং এর ফলে মুখ থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত যে কোনও অঙ্গকে প্রভাবিত হতে পারে। এই অসুখটি বেশিরভাগ উন্নত দেশে দেখা যায় এবং সম্ভবত এটি শহুরের জীবনযাপনেরই প্রভাব। এর প্রভাব গোটা বিশ্বে 0.3% ছাড়িয়ে গিয়েছে। একটি তুলনামুলক সমীক্ষাতে জানা গেছে যে এই রোগের ঘটনা ও তার প্রাদুর্ভাব ভারতেই সবচাইতে বেশি এশিয়ার অন্য দেশের থেকে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
প্রাথমিকভাবে,ক্রনস ডিজিজ ক্ষুদ্ৰান্তে নিম্নভাগকে প্রভাবিত করে। লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং সাধারনত ধীরে ধীরে এটা বাড়তে থাকে, কিন্তু কখনও হঠাৎই দেখা দিতে পারে। সাময়িকভাবে উপশম হয়ে যেতেও পারে, কোনো স্পষ্ট লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকলে। সাধারণত, যখন এই অসুখটি সক্রিয় থাকে, তখন যে উপসর্গগুলি দেখা যায় :
- লাগাতার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া
- জ্বর
- ক্লান্তি
- পেটে ব্যথা এবং টান ধরা
- পায়খানায় রক্ত
- মুখে ঘা
- খারাপ হজমশক্তি
- ওজন কমে যাওয়া
- ফিসচুলা দেখা দেওয়ার ফলে মলদ্বারে ব্যথা
ক্রনস ডিজিজ বাড়াবাড়ি রূপ নিলে যেগুলি দেখা যেতে পারে:
- চোখ, গাঁট ও চামড়ায় প্রদাহ
- হেপাটিক বা পিত্ত নালীতে প্রদাহ
- শিশুদের ক্ষেত্রে যৌন বিকাশে দেরি।
এর প্রধান কারনগুলি কি কি?
এই অসুখে পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই সমানভাবে আক্রান্ত হয় এবং 15 থেকে 35 বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগ খুবই সাধারণ ব্যাপার। ক্রনস ডিজিজের কোনও বিশেষ কারণ হয় না। কিছু ঘটনা এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- বংশগত: বংশে কারওর ক্রনস ডিজিজ থাকলে এই রোগে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: বলা হয় যে ভাইরাস অথবা ব্যাকটিরিয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধী মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক পদ্ধতি পাচন নালীর কোষগুলিকে আক্রমণ করে আর তার ফলে প্রদাহ তৈরি হয়।
- পরিবেশের প্রভাব, যেমন শহরে বসবাস করা এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ ও পরিশোধিত খাবার খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পূর্ব ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
কিছু সাধারন পরীক্ষা যেগুলি সাধারণত করানো হয়:
- রক্তপরীক্ষা :
- কোনও সংক্রমণ, অ্যানিমিয়া, প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া এবং কোনও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাব রয়েছে কি না, তা জানার জন্য।
- রক্ত পড়ছে কি না, তা দেখার জন্য মল পরীক্ষা করা হয়। পাচন নালীতে রক্তক্ষরণ হলে, তা বোঝা যায়।
- রক্তে বায়োমার্কার্স (অ্যান্টিবডি)-এর উপস্থিতি।
- ইমেজিং পরীক্ষা:
- স্ট্যান্ডার্ড ও কন্ট্রাস্ট এক্স-রে
- কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি)
- লিউকোসাইট সিন্টিগ্রাফি
- এন্ডোস্কোপি
- ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং (এম আর আ)
চিকিৎসায় মূলত ওষুধ দেওয়া হয়, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা হয় এবং কখনও আক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়ার জন্য অপারেশন করা হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ঠেকাতে এবং প্রদাহ কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়। ইমুনোমডুলেটর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এজেন্টের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হতে পারে।
- এই দশায় হজম শক্তি দুর্বল হবার কারণে সুষম খাদ্যের সাহায্যে খাদ্যাভ্যাস সংশোধন করলে উপকার পাওয়া যায়। মশলাযুক্ত, তৈলাক্ত, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের চাইতে সাদামাটা খাবার খেলে প্রদাহের সমস্যা কমে।
- ওষুধ ব্যতীত চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারকে সবচেয়ে উপযোগী ধরা হয় । প্রায় 70% ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে।
নিজ যত্ন কিভাবে নেবেন:
- ডাক্তারের দেওয়া এবং ওষুধের দোকান থেকে বলে কিনে আনা ওষুধ যেগুলি আপনি নেন, তার একটি তালিকা বানান। এতে আপনার এবং আপনার চিকিৎসকের আপনার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানতে সাহায্য হবে এবং সেই অনুযায়ী সুনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঠিক করতে।
- স্টেরয়েডবিহীন প্রদাহরোধী ওষুধ ব্যবহার করবেন না। কারন এগুলি আপনার অবস্থা আরও খারাপই করে দিতে পারে। যদি এইরকম কোনও ওষুধ নিতে হয়, তাহলে আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- নিয়মিত মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। কারন এগুলো আপনার অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- নিজে যে উপসর্গগুলি উপলব্ধি করছেন, তা খেয়াল করুন ও লিখে রাখুন।
- নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।