এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া (এন্ডোমেট্রিক হাইপারপ্লাসিয়া) কি?
জরায়ু তিনটি স্তরে গঠিত, যেমন, পেরিমেট্রিয়াম, মায়োমেট্রিয়াম, এবং এন্ডোমেট্রিয়াম। এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর সবচেয়ে ভিতরের স্তর, ছোট ছোট এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে গঠিত যেগুলো ডিম্বাশয় থেকে নিষ্কাশিত হরমোনের প্রভাবে জন্মায়। এন্ডোমেট্রিয়াম অর্থাৎ যেটি প্রতি মাসিক চক্রের সময় জন্মায় ও ঝরে পড়ে, তার ফলস্বরুপ রক্তপাত হয়। ইস্ট্রজেনের মাত্রায় কিছু পরিবর্তনের ফলে, এন্ডোমেট্রিয়ামটির ঘনত্ব বজায় থাকে, এবং এই অবস্থাকেই এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া (এন্ডোমেট্রিক হাইপারপ্লাসিয়া) বলে। এটা ক্যান্সার নয়, কিন্তু্ কিছু ক্ষেত্রে, এটা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলি কি কি?
এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়ার উপসর্গগুলি শুধুমাত্র জরায়ুতে সীমিত নয়; এটি কিছু সাধারণ উপসর্গও সৃষ্টি করতে পারে, যেগুলো হল:
- অস্বাভাবিক মাসিক রজঃস্রাব (প্রচন্ড রক্তপাত অথবা ঘনঘন মাসিক হওয়া)
- দুটি মাসিক চক্রের মাঝখানেও রক্তপাত
- মেনোপজ বা রজোবন্ধের পরেও যোনি থেকে রক্তপাত
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য রক্তাল্পতা
- দূর্বলতা
এর প্রধান কারনগুলো কি কি?
এন্ডোমেট্রিয়াম ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের স্তরের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। সাধারণত, ইস্ট্রোজেনই উদ্দীপিত করে এন্ডোমেট্রিয়াল স্তরটির ঘনত্ব বৃদ্ধি হতে। যখন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশী থাকে এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা তুলনামুলক কম থাকে, তখনই এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া হয়। নিম্নলিখিত বিশেষত্বগুলো যে সমস্ত মহিলার মধ্যে দেখা যায় তাদের এই রোগটি হবার সম্ভাবনা থাকে
- স্থূলতা
- দীর্ঘদিন যাবৎ হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি (এইচআরটি) নেওয়া
- বন্ধ্যাত্ব
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (পিসিওডি)
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
রোগীর চিকিৎসাগত ইতিহাস ও তার সাথে শারীরিক পরীক্ষা থেকে এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া নির্ণয় করা যায়। কিছু পরীক্ষার কথা নিচে উল্লেখ করা হল যেগুলো এটি নির্ণয় করতে তথা ক্যান্সারের সনাক্তকরণে সাহায্য করে:
- পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড – এন্ডোমেট্রিয়ামের ঘনত্ব দেখার জন্য এবং এটির কারণ নির্ণয়ের জন্য
- ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড – এন্ডোমেট্রিয়ামের পরিবর্তন আরো পরিষ্কার ভাবে দেখার জন্য
- হিস্টেরোস্কপি – এন্ডোস্কোপের সাহায্যে এন্ডোমেট্রিয়ামটি পর্যবেক্ষণ করা
- এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি – ছোট টিস্যু বা শরীরকলার নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নীচে মূল্যায়ন তথা ক্যান্সারের সনাক্তকরণ করা হয়
ক্যান্সারের সনাক্তকরণের জন্য নিয়মিত পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড প্রতি 2-3 বছরে করা হয়।
এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হল
- পর্যবেক্ষণ – এটি সবচেয়ে সাধারণ একটি প্রক্রিয়া যা ব্যবহার করা হয় কারন মেনোপজের পরে, ইস্ট্রোজেনের অনুপস্থিতিতে, হাইপারপ্লাসিয়া অকার্যকরী হয়ে যায় বা এটির উপসর্গগুলোও প্রশমিত হয়ে যায়।
- ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা – প্রোজেস্টেরন ট্যাবলেট দেওয়া হয় ওরাল থেরাপি হিসাবে সেইসব মহিলাদের যাদের উপসর্গ স্পষ্ট দেখা যায় বা যাদের মেনোপজের পরেও যোনি থেকে রক্তপাত হয়।
- অস্ত্রোপচারের দ্বারা চিকিৎসা – কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা হওয়া সত্বেও উপসর্গ রয়েই যায়, এন্ডোমেট্রিয়ামটি বার করে দেওয়া হয় এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাবলেশন পদ্ধতিতে, বা খুব গুরুতর ক্ষেত্রে, পুরো জরায়ুটিকে ডিম্বাশয় সহ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়