হাইপোগ্লাইসেমিয়া (সুগার কমে যাওয়া) কি?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া, যেটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া হিসাবে পরিচিত, একটি বিশেষ শারীরিক সমস্যা তাদের জন্য যাঁরা ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত। কোনও কারণে যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার নিচে নেমে যায়, যা শরীরের শক্তির মূল উৎস, তখন হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হন ব্যক্তি।
এর প্রধান কারণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
- লঘু থেকে মাঝারি উপসর্গগুলি হল:
- হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক ছন্দ।
- অবসাদ।
- শরীর কাঁপা অথবা স্নায়বিক দৌর্বল্যগ্রস্ত বোধ হওয়া।
- ফ্যাকাসে ত্বক।
- উদ্বেগ।
- ঘাম হওয়া।
- ক্ষিদে পাওয়া।
- বিরক্তিভাব।
- মুখের চারপাশে চিনচিনে ব্যথার অনুভূতি।
- বিভ্রান্তি বোধ, কোন কিছু বুঝতে না পারা এবং মাথা ঘোরা।
- দুর্বলতা।
- গুরুতর উপসর্গগুলি হল:
- খাদ্যগ্রহণ অথবা তরল পান করতে সমস্যা।
- তড়কা লাগা বা খিঁচুনি ধরা।
- সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়া বা মূর্ছা যাওয়া।
- ঘুমের সময় যেসব উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
- দুঃস্বপ্ন দেখা।
- প্রচুর পরিমাণে ঘাম হওয়া যাতে জামাকাপড় ভিজে যায়।
- ঘুম থেকে ওঠার পর অবসাদগ্রস্ত ও দুর্বলতাবোধ হওয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি হল:
- ডায়াবেটিস মেলিটাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, যেমন সালফোনাইরিউরিয়াস বা মেগলিটিনাইডস।
- মদ্যপান বিশেষত খালি পেটে।
- প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ে টিউমার, এই অবস্থায় অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ হওয়ার কারণে রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ হ্রাস পায় (ইনসুলিন এমন এক ধরণের হরমোন, যার কাজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমানো)।
- হাইপারইনসুলিনিজম বা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রাধিক্য এবং গ্লুকোজ বা শর্করা বিপাকে সমস্যা।
- ঝুঁকির কারণগুলি হল:
- খাবার দেরিতে খাওয়া বা খাবার না খাওয়া।
- অপর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যগ্রহণ।
- অসুস্থতা।
- শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি পাওয়া।
- কিডনি বা বৃক্কের অসুখ।
- লিভার বা যকৃতের রোগ।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ খেলে, গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর সবসময় নজর রাখা প্রয়োজন। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক রোগীর শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসাগত ইতিহাসও বিশ্লেষণ করেন। হাইপোগ্লাইসেমিয়া গুরুতর আকার নিলে তার উপসর্গগুলি স্পষ্টভাবে দেখা দেয়, আর এক্ষেত্রে ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে দেন। তবে, প্রাথমিকভাবে ডাক্তার দেখানোর সময় যদি সেভাবে কোনওরকম উপসর্গ না ফুটে ওঠে, তাহলে ডাক্তার সারারাত্রি উপোস করে পরদিন তাঁর কাছে আবার আসার পরামর্শ দিতে পারেন শারীরিক পরীক্ষার জন্য।
যেসব শারীরিক পরীক্ষাগুলি করা হয়:
- খাওয়ার আগে ও পরে রক্ত পরীক্ষা করা হয় রক্তে শর্করার মাত্রা জানার জন্য।
- উপসর্গ দেখা দিলে রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণের পরীক্ষা করা হয়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হিসাবে 15 থেকে 20 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে বলা হয়, গ্লুকোজ ট্যাবলেট, ফলের রস অথবা মিষ্টি লজেন্স, মধু, অথবা সাদা চিনি খেতে পারেন, যেগুলি শরীরে প্রবেশের পর সহজে শর্করাতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
সমস্যা গুরুতর হলে ইঞ্জেকশন দেওয়া অথবা তরল গ্লুকোজ সরারসি শিরায় প্রবেশ করানো যেতে পারে।
তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কত রয়েছে, তা 15 মিনিট অন্তর পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন এবং তারপর থেকে সঠিক মাত্রা বজায় রাখা প্রয়োজন। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার অন্তর্নিহিত কারণ দূর করার জন্য ডায়াবেটিসের জন্য যেসব ওষুধ খাচ্ছেন রোগী, তা প্রয়োজনে বদলে দিতে পারেন চিকিৎসক অথবা অগ্ন্যাশয়ের টিউমারের ক্ষেত্রে ডাক্তার তা অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে পারেন।