মিনিয়ার্স ডিজিজ কাকে বলে?
মিনিয়ার্স ডিজিজ হল অন্তঃকর্ণের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট তিনটি উপসর্গের সম্মিলন। এর ফলে ভারসাম্যের অভাব হয় ও শ্রবণশক্তি লোপ পায়, যেহেতু এই দুটি ক্রিয়াই মানবদেহের অন্তঃকর্ণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
মিনিয়ার্সের সবথেকে পরিচিত ও সাধারণ উপসর্গগুলি নিচে দেওয়া হল:
- ভার্টিগো বা মাথা ঘোরার অনুভূতি।
- কানে তীক্ষ্ণ ঝিঁঝিঁ শব্দ বা জোরালো শব্দ শোনা, যাকে টিনিটাস বলে।
- আকস্মিক শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়া।
- কানের ভিতরে চাপের অনুভূতি।
- বমিভাব।
এটির প্রধান কারণগুলি কি কি?
এখনো পর্যন্ত এই রোগের কোন নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত হয়নি। তবে, একাধিক ঘটনা সম্মিলিতভাবে মিনিয়ার্স ডিজিজ ঘটাতে পারে।
মিনিয়ার্স ডিজিজের কয়েকটি কারণ নিচে দেওয়া হল:
- কানের মধ্যে উপস্থিত তরলে রাসায়নিক ভারসাম্যের অভাব।
- কানে তরলের অধিক সঞ্চয় যার ফলে ভারসাম্য এবং শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
- দীর্ঘ সময় ধরে অতি জোরালো শব্দের সংস্পর্শে থাকা।
- বংশানুক্রমিক হতে পারে।
- অনিয়ন্ত্রিত ও উচ্চ লবণযুক্ত খাদ্যগ্রহণ।
- অ্যালার্জি।
- মাথায় আঘাত।
- ভাইরাল সংক্রমণ।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
রোগী এই সমস্যায় ভুগছেন কিনা তা নিশ্চিত জানতে আলাদা ভাবে ভারসাম্য ও শ্রবণের পরীক্ষা করা হয়।
শ্রবণশক্তির পরীক্ষা- শ্রবণশক্তির অভাব চিহ্নিত করতে অডিওমেট্রি বা শ্রবণের পরীক্ষা করা হতে পারে। এর সাহায্যে বোঝা যায় রোগীর একটি না দুটি কানেই শোনার সমস্যা হচ্ছে।এর সঙ্গে ইলেক্ট্রোকক্লিওগ্রাফি (ইসিওজি) করা হয় অন্তঃকর্ণের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ মাপার জন্য। শ্রবণের সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলির এবং মস্তিষ্কের অঞ্চলের ক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য অডিটোরি ব্রেনস্টেম রেসপন্স পরীক্ষাটিও করা হয়। এই পরীক্ষাগুলো নির্ধারণ করে সমস্যাটি অন্তঃকর্ণের নাকি শ্রবণস্নায়ুর।
ভারসাম্য পরীক্ষা- মিনিয়ার্স ডিজিজের সবথেকে প্রচলিত ভারসাম্য পরীক্ষাটি হল ইলেক্ট্রোনিস্টাগমোগ্রাফি (ইএনজি)।
মিনিয়ার্স ডিজিজের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে কিছু ওষুধ ভার্টিগো,বমিভাব ও টিনিটাস উপসর্গগুলির নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভার্টিগোর সমস্যার ক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত তরলের সঞ্চয় কমানোর জন্য ডাইইউরেটিক নামক ওষুধ দেওয়া হয়। উপযুক্ত ক্ষেত্রে, সমস্যার গুরুত্বের উপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচার ও হিয়ারিং এড ব্যবহার করা হতে পারে।
মিনিয়ার্স ডিজিজের আক্রমণ এড়ানোর জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলি হল:
- ধূমপান না করা।
- লবণ নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।
- এলকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা।