মাল্টিপল মায়লোমা কি?
মাল্টিপল মায়লোমা এক ধরনের ক্যান্সার যা শরীরের প্লাজমা কোষে ঘটে। এই কোষ সাধারণত অস্থিমজ্জায় পাওয়া যায় এবং অনাক্রম্য পদ্ধতির একটি অংশ গঠন করে। মাল্টিপল মায়লোমায় অস্থিমজ্জায় অধিক পরিমাণে প্লাজমা কোষ সঞ্চিত হতে থাকে যার ফলে রক্ত কোষগুলির উৎপাদন ব্যহত হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
পরবর্তী পর্যায়ে মাল্টিপল মায়লোমার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি ব্যাপক ব্যাপ্তি দেখাতে শুরু করে, তার মধ্যে কিছু হল:
- অনবরত হাড়ে ব্যথা।
- হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ফলে এমনকি সামান্য আঘাতেও প্রায়শই হাড় ভেঙে যায়।
- রক্তাল্পতা।
- প্রায়শই সংক্রমণ হওয়া।
- রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য পেটে ব্যথা, অত্যধিক পিপাসা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এবং সর্বদা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকতে দেখা যায়।
- কিডনির সমস্যা হতে শুরু হয় যার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
মাল্টিপল মায়লোমার সঠিক কারণটি ডাক্তাররা বর্ণনা অথবা নিশ্চিত করতে পারেন না, কিন্তু মনে করা হয় কিছু নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর আছে যা মাল্টিপল মায়লোমার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। 35 বছরের ঊর্ধ্বে, স্থূলতা, মাল্টিপল মায়লোমার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এবং পুরুষ এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে এই অবস্থা পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
টিউমার সাপ্রেশর জিন এবং অঙ্কোজিনের ভারসাম্যহীনতাই এর অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের শরীরে কোষের বৃদ্ধির জন্য অঙ্কোজিন দায়ী, অন্যদিকে টিউমার সাপ্রেশর জিন সঠিক সময়ে কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় বা কোষের মৃত্যু ঘটায়। এই জিনগুলির বিবর্তন বা ত্রুটিপূর্ণ কাজের জন্য প্লাজমা কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, ও মাল্টিপল মায়লোমা পরিলিক্ষিত হয়।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
যদি উপসর্গগুলি এবং লক্ষণগুলি মাল্টিপল মায়লোমার নির্দেশ দেয় তাহলে, এক্স-রে, সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান, পিইটি স্ক্যান, অথবা এমআরআই এর নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। এই স্ক্যানগুলি টিউমারের অবস্থান এবং বিস্তার নির্ধারণে সাহায্য করে।
মাল্টিপল মায়লোমা নিশ্চিত করার জন্য বায়োপ্সি সবথেকে বেশী কার্যকারী। অস্থিমজ্জায় ক্যান্সারযুক্ত প্লাজমা কোষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য অস্থিমজ্জা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
মাল্টিপল মায়লোমার জন্য কেমোথেরাপি হল সবথেকে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যদিও এর কিছু নির্দিষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কেমোথেরাপির ওষুধগুলি ক্যান্সারযুক্ত কোষ এবং টিউমারের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য ওষুধও ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সেগুলি সবসময় রোগ নিবারণে সফল হয় না বা অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
- স্টেরয়েড - স্টেরয়েড সাধারণত কেমোথেরাপির ওষুধের পরিপূরক হিসেবে এবং তাদের অধিক কার্যকর করতে ব্যবহৃত হয়। স্টেরয়েডের প্রধান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হল বুকজ্বালা, বদ হজম এবং ঘুমোতে অসুবিধা হওয়া।
- থ্যালিডোমাইড - থ্যালিডোমাইডও মায়লোমা কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যবহারের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য বা মাথা ঘোরার মত সমস্যা দেখা দেয়। উপরন্তু, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে যার জন্য পায়ে ব্যথা বা পা ফুলে যেতে পারে, নিঃশ্বাসে অসুবিধা বা বুকে ব্যথা হতে পারে।
- স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন - মায়লোমার চূড়ান্ত পর্যায়ে, স্টেম কোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর স্টেম কোষগুলির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত অস্থিমজ্জা কলার প্রতিস্থাপন করা হয়, যা নতুন কোষের বৃদ্ধি ও অস্থিমজ্জার পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
এই চিকিৎসা খুবই খরচসাপেক্ষ, যন্ত্রনাদায়ক এবং এই চিকিৎসার জন্য রোগী ও ডাক্তারের মাঝে যথেষ্ট বোঝাপড়ার প্রয়োজন।