মাসিকের সমস্যা কি?
মাসিক মহিলাদের রজঃস্রাব চক্রের একটা স্বাভাবিক অংশ যেটা প্রতি মাসেই হয়। রজঃস্রাব শুরু হয় বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালে, সাধারণত 10 থেকে 12 বছর বয়সে এবং নিয়মিত চলতে থাকে কেবল গর্ভাবস্থার সময়, স্তনদুগ্ধপানের সময় ও মেনোপসের সময় ছাড়া।রজঃস্রাব চক্রে অনিয়ম হলে তার ফলে মসিকের সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- অ্যামেনোরিয়া বা বাধক (মাসিক রজঃস্রাবের অনুপস্থিতি)।
- ডাইস্মেনোরিয়া (ব্যাথাযুক্ত রজঃস্রাব)।
- অলিগোমেনোরিয়া (অনিয়মিত রজঃস্রাব)।
- মেনোরাগিয়া (প্রচুর রক্তপাত)।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
মাসিক সমস্যায় বিশেষত নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:
- ব্যথা।
- খিচুনি।
- মাথাব্যাথা।
- ফুলে যাওয়া বা ফেঁপে যাওয়া।
- প্রচন্ড বা খুব কম রক্তপ্রবাহ।
- অনিয়মিয় রক্তপ্রবাহ।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
স্বাভাবিক মাসিক চক্র আপনার সুস্থ্য প্রজনন ক্ষমতার ইঙ্গিত করে। মেনার্কের সময়, প্রথম কিছু মাস অনিয়মিত মাসিক দেখা দিতে পারে, যাইহোক, ধীরে ধীরে এই চক্র নিয়মিত হয়ে যায় এবং 22-31 দিন পরপর হয়। নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য মাসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- পলি সিস্টিক ওভারিয়ান রোগ (পিসিওডি): ডিম্বাশয়ে সিস্টের উপস্থিতি।
- এন্ডোম্ট্রিওসিস: জরায়ুর বাইরের দেয়ালে এন্ডোমেট্রিয়াল টিসুর উৎপত্তি যেগুলো মাসিক রজঃস্রাবের সময় বেরিয়ে যায়।
- হরমোনের অসাম্য।
- জরায়ুতে ফাইব্রয়েডস্।
- ইন্ট্রাইউটেরাইন মাধ্যম (আইইউডি)।
- হরমোনের ওষুধ।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
- রক্ত জমাটের সমস্যা।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যদি আপনি এর মধ্যে কোনো একটি মাসিকের সমস্যায় ভোগেন তাহলে আপনার স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এই মসিকের সমস্যার সময়মতো চিকিৎসা না করালে ভবিষ্যতে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিম্নলিখিত উপায়ে সনাক্তকরণ করা হয়:
- মাসিক রজঃস্রাবের বিশদ ইতিহাস।
- শারীরীক পরীক্ষা।
- জরায়ুর অভ্যন্তরীন পরীক্ষা।
- হরমোন নির্নয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা।
- প্রস্রাব বিশ্লেষণ।
- আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং।
- এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি।
- হিস্টেরোস্কপি (জরায়ুর অভ্যন্তরীন অংশের পরীক্ষা)।
মাসিক সমস্যার শীঘ্র চিকিৎসা হওয়া দরকার, উপসর্গ দুর করার এবং এর অন্তর্নিহিত কারণ উভয়েরই চিকিত্সা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন:
- হরমোনের চিকিৎসা।
- রক্ত জমাট ভাঙা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং অধিক রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্লাস্মিনোজেন অ্যাক্টিভেটর ইনহিবিটর।
- ব্যথা কমাতে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরী ওষুধ (এনএসএআইডিএস)।
- রক্তপ্রবাহ বন্ধ করতে হিমোস্ট্যাটিকস্।
- ব্যথা কমাতে গরম জলের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
- মাসিকের সময় পেলভিকের ব্যথা কমাতে ব্যায়াম করুন।
স্বাভাবিক মাসিক চক্র এবং মাসিকের সময় সাধারণত যে ঘটনাগুলো হয় সেগুলো বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন আপনার স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের দ্বারা নিয়মিত চেক আপ করালে আপনি মাসিকের সমস্যা থেকে সুস্থ হতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে কোনরকম জটিলতা এড়াতে পারবেন।