ল্যারিনজাইটিস কি?
ল্যারিংক্স অর্থাৎ স্বরযন্ত্র ও ভোকাল কর্ড অর্থাৎ স্বরতন্ত্রীর প্রদাহকে ল্যারিনজাইটিস বলে। এতে স্বরতন্ত্রীর অনুপযুক্ত কম্পনের ফলে কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় গিয়েছে, 30 - 50 বছর বয়সীদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। প্রতি 1000 জনের মধ্যে 3.5 জন ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ল্যারিনজাইটিসে ভোগেন।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এই রোগের গুরুতর লক্ষণগুলি হল:
- কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন বা কর্কশভাব।
- গলাব্যথা।
- জ্বর।
- মাথা যন্ত্রণা।
- কাশি।
- শ্বাস প্রশ্বাসের সময় সাঁইসাঁই শব্দ।
- নাক দিয়ে জল পড়া।
জটিলতা তৈরি হয় যখন অ্যাসিড রিফ্লাক্স (পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড উঠে আসা) এর ফলে পেট থেকে অ্যাসিড ল্যারিংক্স বা স্বরযন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছনোর কারণে ল্যারিনজাইটিস দেখা দেয়।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
ল্যারিনজাইটিসের প্রধান কারণ হল ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যদিও ভাইরাল ল্যারিনজাইটিসের ঘটনাই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। স্বরতন্ত্রী বা ভোকাল কর্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই অবস্থা বাড়িয়ে তুলতে পারে। 3 সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে, একে ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ল্যারিনজাইটিস বলে। ল্যারিনজাইটিসের অন্যান্য কারণগুলি হল:
- ধূমপান।
- অতিরিক্ত মদ্যপান।
- শ্বাসের মাধ্যমে উদ্বায়ী পদার্থ, নির্দিষ্ট রাসায়নিক এবং ধোঁয়ার মতো অস্বস্তি সৃষ্টিকারী বস্তু ভিতরে যাওয়া।
- ভোকাল কর্ডের উপর অত্যধিক চাপ।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা হয়?
সাধারণত উপসর্গের মূল্যায়ন এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস থেকে ল্যারিনজাইটিসের কারণ বোঝা যেতে পারে। স্বরযন্ত্র পরীক্ষার জন্য সাধারণত ল্যারিঞ্জোস্কোপ নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সাধারণত এই অসুস্থতা আয়ত্তের মধ্যেই থাকে এবং আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যায়। রোগটি কিসের জন্য ঘটেছে তার উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হতে পারে। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ফলে দেখা দিলে অ্যান্টি-অ্যাসিডিটি ওষুধ উপশম দিতে পারে।
নিজে যত্ন নেওয়ার টিপস:
- বেশি করে জল খান, যাতে ক্ষতিকর পদার্থগুলি বেরিয়ে যায়।
- যেকোনও রকম ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন।
- উষ্ণ নুনজল দিয়ে গার্গল করুন।
- গলাকে যতটা সম্ভব বিশ্রাম দিন, জোরে কথা বলা এড়ান।
- বন্ধ নাক খুলতে শ্বাসের সঙ্গে গরম জলের ভাপ নিন।
- বন্ধ নাক খোলার ড্রপ (নাসাল ডিকনজেসট্যান্ট) ব্যবহার করবেন না, এগুলি গলাকে শুকনো করে দেয়।
যদি এই পথ্যে কাজ না হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ল্যারিনজাইটিস গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছলে, তা থেকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, এবং এর জন্য আপৎকালীন চিকিৎসার দরকার পড়ে।