ফ্রি র্যাডিকেল একটি অণু যাতে একটি অতিরিক্ত বিজোড় ইলেকট্রন থাকে, ফলে এটি জোড় বন্ধনের জন্য খুবই সক্রিয় থাকে। এই উদ্দেশ্যে এটি শরীরের কোষের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ক্ষতিকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি বলা হয়, এবং এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের এবং প্রক্রিয়ার পক্ষে ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন অসুখের মূল কারণ হল এটি।
দেহের বিপাক প্রক্রিয়ার ফলে, অথবা বিভিন্ন কারণে, যেমন পরিবেষ দূষণ, রাসায়নিক, কীটনাশক, ধোঁয়া, ইউভি রশ্মি, রঞ্জন রশ্মি ইত্যাদির সংস্পর্শে এসে ফ্রি র্যাডিকেলগুলির সৃষ্টি হয়। এ'ছাড়া খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত 'জাঙ্ক ফুড' থাকলেও ফ্রি র্যাডিকেল সৃষ্টি হতে পারে।
এগুলি সক্রিয় ভাবে দেহের কোষের উপরে ক্রিয়া করে, বিশেষত ত্বকের কোষের উপরে। ফলে চামড়ায় অকাল বার্ধক্যের চিহ্ন, যেমন বলিরেখা, দেখা দেয়। ফ্রি র্যাডিকেলগুলি চুলেরও প্রভূত ক্ষতি করে - বয়সের সাথে সাথে চুল পেকে যায় এবং ঝরে যায়।
বয়স সম্পর্কিত অ্যালোপেসিয়া (মাথায় ছোট ছোট জায়গায় টাক পড়া) শুরু হয় অক্সিডেটিভ চাপের কারণে। কাজেই সঠিক ভাবেই বলা হয়েছে যে বুড়িয়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে অক্সিডেটিভ চাপ।
(আরও পড়ুন: টাকের চিকিৎসা)
মানব দেহের উপরে ফ্রি র্যাডিকেলের অন্যান্য প্রভাবগুলি হল:
- প্রদাহ জনিত সমস্যা (ব্যথা, ফুলে যাওয়া অথবা লাল হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা) যেমন আর্থ্রাইটিস, লুপাস এরিথেম্যাটসাস (আরও পড়ুন: সন্ধি বাত)
- কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার সমস্যা যেমন এ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ইস্কিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ (আরও পড়ুন: এ্যাঞ্জিনার চিকিৎসা)
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন গ্যাস্ট্রিক আলসার
- অটোইমিউন সমস্যা যেমন রিউমাটইড আর্থ্রাইটিস
- স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা যেমন স্মৃতি-ভ্রম, আল্জ্হেইমের রোগ, পারকিনসন রোগ
- পেশীতে যথোপযুক্ত পুষ্টির অভাব
- চক্ষু রোগ যেমন ছানি পড়া, ঝাপসা দেখা, অন্ধত্ব (আরও পড়ুন: রাত্রিকালীন অন্ধত্ব)
- মধুমেহ
ফ্রি র্যাডিকেল সৃষ্টি একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। তবে খাদ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির পরিমাণ বাড়িয়ে, ফ্রি র্যাডিকেলের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়াটি সংশোধন করা যেতে পারে।
খাদ্যের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তার একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রন ফ্রি র্যাডিকেলকে প্রদান করে যাতে তারা জোড় বেঁধে রাসায়নিক অস্থায়িত্ব দূর করতে পারে। অতএব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেলের কার্যকলাপকে প্রতিরোধ করে দেহের কোষের অক্সিডেটিভ ক্ষতি রোধ করতে পারে। সেই জন্যই দৈনন্দিন খাদ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একটি অপরিহার্য উপাদান।