গত ৫০০০ বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্র প্রচুর ভেষজ গাছড়ার ব্যবহার করে চলেছে এগুলির ভেষজগুণ ও স্বাস্থ্যবর্ধক বৈশিষ্ট্যের জন্য। আয়ুর্বেদিক ও ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বদাই সামগ্রিক চিকিৎসার ওপর বেশি নির্ভর করে থাকে। এই প্রবন্ধে আমরা ত্রিফলা নামক একটি অতি মূল্যবান গাছড়ার উপকারিতা এবং তা ব্যবহারের পদ্ধতির ওপর আলোকপাত করবো। আপনি যদি নিয়মমাফিক আয়ুর্বেদিক বা অন্য কোন ভেষজ ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাহলে ত্রিফলা আপনার নজরে পড়ে থাকবেই। বহুভেষজ(একাধিক ভেষজ গাছড়া থেকে নির্মিত) প্রচুর প্রণালীর উল্লেখ “শরঙ্গধার সংহিতা” নামক একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে পাওয়া যায়, বিশেষত ত্রিফলার গুনাগুণ সম্পর্কে তথ্য “চরক সংহিতা”-তে বিশদে পাওয়া যায়। ত্রিফলার ব্যপারে সবকিছু জানতে আরও পড়ুন।
ত্রিফলা কি?
ত্রিফলা হল একটি অতি প্রসিদ্ধ আয়ুর্বেদিক প্রণালি যেটি আমলা(এম্বলিকা অফিসিনালিস), বিভিতকি বা বহেড়া(তারমিনালিয়া বেলিরিকা)এবং হরিতকি বা হরদ(তারমিনালিয়া চেবুলা) এই তিনটি ফল থেকে তৈরি করা হয়। বস্তুত ত্রিফলা শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “তিনটি ফল”(ত্রি=তিন ও ফলা=ফল)। আয়ুর্বেদে ত্রিফলা উল্লেখযোগ্য তার রাসায়নিক গুণাবলীর জন্য যার অর্থ এটি আমাদের শরীরস্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তি বজায় রাখতে এবং রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ত্রিফলা হল নিম্নোক্ত ভেষজ উদ্ভিদের সমাহার।
- আমলা (এম্বলিকা অফিসিনালিস) :
দেশের সর্বত্র সবচেয়ে সহজপ্রাপ্য ফলগুলির একটি, এটিকে সাধারণত ভারতীয় গুজবেরিও বলা হয়ে থাকে। আমলা ফলটি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এবং এটি ভিটামিন সি-এর বিশ্বের উৎকৃষ্টতম উৎস। সাধারণত এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে এবং বার্ধক্যপ্রতিরোধী একটি ফল হিসেবে। - বহেড়া (তারমিনালিয়া বেলিরিকা):
ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র উপলব্ধ এই ফলটি আয়ুর্বেদ এবং অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থায় জায়গা করে নিয়েছে জ্বর প্রতিরোধকারী, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও যক্কৃত সুরক্ষাকারী হিসেবে, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসা সাধনকারী হিসেবে এবং ডায়বিটিস বিরোধী মহৌষধ হিসেবে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী গ্লুকোসাইড, ট্যানিন, গ্যালিক এসিড, ইথাইল গ্যালেটের মত একগুচ্ছ জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ এই বহেড়া ফল। একত্রে এইসব উপাদানগুলিই হল বহেরার স্বাস্থ্যপোকারী বৈশিষ্ট্য। - হরদ (তারমিনালিয়া চেবুলা):
আয়ুর্বেদে বর্ণিত ভেষজ উদ্ভিদগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল হরদ। এটির স্বাস্থ্যপোকারীতা অপরিসীম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহবিরোধী ও বার্ধক্যবিরোধী হওয়ার পাশাপাশি চমৎকার ক্ষয়প্রশমণকারী হিসেবেও এর সুখ্যাতি আছে। যক্কৃৎ, পাকস্থলী, হৃদয় এবং মুত্রাশয়ের স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার ও বজায় রাখার ক্ষেত্রেও আয়ুর্বেদে এর সুখ্যাতি আছে। সেই কারণেই একে “ওষুধের রাজা” বলাটাও যথার্থ।
জানতেন কি?
আয়ুর্বেদে বর্ণিত আছে যে ত্রিফলা দেহের তিনটি দোষের( বাত, পিত্ত, কফ) মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বলা আছে যে ত্রিফলাতে পাঁচ ধরণের রস বা স্বাদ আছে। এতে মিষ্টি, তিক্ত, তীব্র, তিক্ত ও কষা স্বাদ বর্তমান। শুধুমাত্র নোনতা স্বাদটাই এখানে বিদ্যমান নয়।